বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৪৪ অপরাহ্ন

গাইবান্ধায় সিন্ডিকেটের কবলে কৃষক

গাইবান্ধা  জেলা প্রতিনিধি:হাটত ভুট্রা আনার পর ওমরা যে দাম কয়, সেই দামেই মাল ব্যাচা নাগে’, মাল তো ঘুরিও নিয়্যা যাবার পাইন্যা’, এভাবেই নিজের ক্ষোভ আর হতাশার কথা জানান সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া গ্রাম থেকে ভুট্রা নিয়ে কামারজানি হাটে বিক্রি করতে আসা রঞ্জু মিয়া। সেখানেই কথা হয় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে। তিনি আরও বলেন, ‘আড়তদার আব্দুল লতিফ মিয়ার আড়তে ১১’শ/১২’শ টাকা করে ১’শ মন ভুট্রা বিক্রি করেছিলেন আজ থেকে ২০ দিন আগেও। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে একই হাটে ভুট্রা বিক্রি করতে হচ্ছে ৯৭০ টাকা মণ দরে। দিন গেলে ভুট্রা শুকনো হয়, দাম আরও বাড়ে। কিন্তু এখানে উল্টোটা হচ্ছে।’

সেখানেই কথা হয় কামারজানি হাটের আড়তদার মেসার্স আব্দুল লতিফ আড়তের স্বত্ত্বাধিকারী লতিফ মিয়ার সঙ্গে। তার কন্ঠেও ক্ষোভ আর হতাশা। তিনি বলেন, ‘ভুট্রা কাটা-মারাইয়ের প্রথম দিকে ভুট্রার মণ ছিল ১৪০০ টাকা। কিন্তু দেখা যায়, মিলারেরা এখানকার স্থানীয় কয়েকজনকে মাল কেনার দায়িত্ব দেয়। তাদেরই ৪/৫ জন এখানে সিন্ডিকেট করে পার মণে ১০০/২০০/৩০০ টাকা করি কমে দেয়। ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে পরচ্যে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আবার দেখা যায় মালের দাম কেজিতে ১/২ টাকা করি কম দেয়। এটা জানতে চাইলে মিলাররা এই দাম দিচে, দিলে দেও, না দিলে নাই’, বলে জানিয়ে দেন এখানকার (কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদ) চেয়ারম্যান (ভুট্রা ব্যবসায়ী)’।

ভুট্রা বিক্রি করতে আসা নতুন বন্দর এলাকার কৃষক রশিদ মিয়া বলেন, ‘হামরা সরাসরি ভালো মাল দিত্যেম, ন্যায্য মূল্য নিয়্যা বাড়িত যাত্যেম, হামরা তো মনের সুখে আরও বেশি আনন্দ নিয়্যা আবাদ করত্যাম। কিন্তু এখানে যেভাবে কার্যকল্যাপ চলতিছে, এভাবে তো হয়না। হামরা কষ্ট করি পাট, ভুট্রা, ধান আবাদ করতিছি, কিন্তু হামরা তো কোন ফসলেরই দাম পাচ্চিন্যা’। এভাবে হামারঘরক তো উজার (সর্বস্বান্ত) করবের নাগচ্যে’।

গাইবান্ধায় বরাবরের মতো এবারও ভুট্রার ফলন ভালো হয়েছে। এ নিয়ে কৃষকের কোন অসন্তোষ নেই। তবে, রোদ, ঝড়, বৃষ্টি মাথায় করে বাড়তি ব্যয়ে উৎপাদন করে, সেই উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কিছুটা হতাশ ভুট্রা চাষিরা। শুধু ভুট্রা নয়, এ অভিযোগ চরাঞ্চলে উৎপাদিত প্রায় সব পণ্যের ক্ষেত্রে।

গাইবান্ধায় সরকারি হিসেবে অনুযায়ী জেলায় চর-দ্বীপচর আছে ১৬৫টি। সাত উপজেলা নিয়ে গঠিত নদীবেষ্টিত গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা এই তিন উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ভুট্রার চাষ হয়। এছাড়াও পলাশবাড়ী, সাদুল্লাপুর ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাতেও ভুট্রার চাষ দিনে দিনে বাড়ছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জেলায় প্রায় ১৭ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় ছাড়িয়ে গেছে উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রাও। তবে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম বন্ধ করতে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন এ অঞ্চলের কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্ট সচেতন নাগরিক সমাজ।

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় (সহকারী সম্পাদক) নেতা মিহির ঘোষ বলেন, ‘কৃষকের ঘাম ঝরানো পরিশ্রম আর উৎপাদনের গতি ঠিক থাকলেও, ঠিক করা যায়নি কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বন্ধের কোন ব্যবস্থা। কৃষক পর্যায় থেকে খুচরা বাজারে আসতে কৃষিপণ্য চার-পাঁচ হাত বদল হয়। এতে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের মূল্য তিন গুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে লাভের সব টাকা চলে যায় সিন্ডিকেটের হাতে। কৃষি বিপণন অধিদফতরের আরও যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। সরাসরি কৃষকের কাছে পণ্য কেনার জন্য পর্যাপ্ত সরকারি ক্রয় কেন্দ্র এবং সব ধরনের কৃষি পণ্যের সংরক্ষণাগারের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে কৃষকের অবস্থার পরিবর্তন হবে না।’

এ বিষয়ে কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বর্তমানে ভুট্রা ক্রয় কেন্দ্র রয়েছে ১৪টি। কামারজানি বড় হাট হলেও এখনো সেখানে ক্রয় কেন্দ্র করা যায়নি। ফলে সেখানকার বাজার ব্যবস্থা অনেকটাই অনিয়ন্ত্রিত। সেখানে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। কৃষি পণ্য এবং কৃষকদের নায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হলে কৃষিজোন বা কোল্ড স্টোরেজের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি বেসরকারি কোম্পানিগুলোর কাছে সরাসরি কৃষককে পণ্য বিক্রির সুযোগ করে দিতে হবে।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, জেলার ব্রান্ডিং পণ্য ভুট্টার ন্যায্য মূল্য পেতে পরিকল্পিত বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। সিন্ডিকেট এবং অবৈধ মজুতদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কৃষকের মঙ্গলের জন্য আমরা সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছি।

Please Share This Post in Your Social Media

উপদেষ্টা মন্ডলীর সভাপতি :বীরমুক্তিযোদ্ধা আইয়ূব আলী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক :সাংবাদিক এ.আর.এস.দ্বীন মোহাম্মদ
প্রধান কার্যালয় : বুরোলিয়া তালুকদার পাড়া, মোশারফ প্লাজা ৩য় তলা ,গাজীপুর  সদর, গাজীপুর   ।
মোবাইল: ০১৭৪৬৪৯৪৬১০,০১৯৯৫৯০৮০৬৩,০১৯৮৫১৮৫৮৮৪
কারিগরি সহযোগীতায় : দ্বীনিসফট